মহাকাশ
মহাশূণ্য অথবা মহাকাশ বলতে সাধারণভাবে মাথার উপরকার অনন্ত আকাশ বোঝানো হলেও বস্তুত পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলসমৃদ্ধ আকাশকে পৃথিবীর আকাশ বলা হয়। তাই পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে মহাকাশ হলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরের অনন্ত স্থান। এ আকাশসীমায় অতি অল্প ঘনত্বের বস্তু বিদ্যমান। অর্থাৎ শূন্য মহাশূন্য পুরোপুরি ফাঁকা নয়। প্রধানত, অতি অল্প পরিমাণ হাইড্রোজেন প্লাজমাতড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণচৌম্বক ক্ষেত্র এবং নিউট্রিনো এই শূন্যে অবস্থান করে। তাত্ত্বিকভাবে, এতে কৃষ্ণবস্তু এবং কৃষ্ণশক্তি বিদ্যমান।মহাশূন্য এমন অনেক কিছু আছে যা মানুষ এখনও কল্পনা করতে পারেনি।

শব্দগত ব্যাখ্যা[উৎস সম্পাদনা]

বাংলায় নভঃব্যোম ইত্যাদি শব্দেও মহাকাশকে সূচিত করা হয়।

আবিষ্কার[উৎস সম্পাদনা]

মহাশূন্য সুপ্রাচীনকাল থেকে মানুষের কৌতূহলের বিষয়। প্রত্যেক সভ্যতা ও মানুষ সবসময় মহাকাশকে কৌতূহলের দৃষ্টিতে দেখেছে। প্রাচীন সভ্যতা সমূহ ও মানুষেরা মহাশূন্যের ব্যাপারে নানা কাল্পনিক ব্যাখ্যা দিত। যথাঃ হাতির উপর উল্টানো থালা, বিশাল চাদর, পবিত্র আত্মা ও দেবতাদের বাসস্থান ইত্যাদি। প্রাচীন গ্রিক, রোমান, মিশরীও, বেবিলনীয়, ভারতীয়, চীনা, মায়া ইত্যাদি সভ্যতা মহাশূন্যকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। কিন্তু সকল সভ্যতাই মহাকাশকে বিজ্ঞানের বিষয় হিসেবে কম-বেশি গ্রহন করেছিলো।
প্রাচীনকালের মহাকাশ আবিষ্কার ও পর্যবেক্ষণ
প্রাচীন গ্রিক ও রোমানরা প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞান ও পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভুমিকা পালন করেছে। প্রাচীন গ্রীসে মহাকাশ কে দর্শনশাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তারা নক্ষত্র সমূহকে একে অপরের সাথে সংযুক্ত করে নানা রুপ দিয়েছিল এবং এগুলোর অধিকাংশের নাম গ্রিক ও রোমান দেবতাদের নামে রাখা হয়। যা এখনও বিজ্ঞানী ও মহাকাশ পর্যবেক্ষণকারীদের নানা ভাবে সাহায্য করছে। চাঁদ এবং খালি চোখে দৃশ্যমান গ্রহগুলোর গতিপথও এর অন্তর্ভুক্ত। প্রাচীন গ্রিক ও অন্যান্য সভ্যতা সমূহ এর মাধ্যমে রাশিচক্র আবিষ্কার করে। নক্ষত্রচাঁদধুমকেতু ইত্যাদি প্রাচীনকাল থেকে পর্যবেক্ষণ করে আসছে মানুষ। ঋতুর পরিবর্তন, দিন-রাত, নক্ষত্রের স্থান পরিবর্তন (পরবর্তীতে যা গ্রহ প্রমাণিত হয়) ইত্যাদির হিসাব ও গাণিতিক ব্যাখ্যার সাহায্যে সুপ্রাচীনকাল ও প্রাচীনকালে অনেক সমৃদ্ধি লাভ করে।
মধ্যযুগের মহাকাশ আবিষ্কার ও পর্যবেক্ষণ
মধ্যযুগে দূরবীক্ষণ যন্ত্রর আবিষ্কারের ফলে এর ব্যাপক প্রসার ঘটে। হান্স লিপারশে (Hans Lippershey) এবং জাকারিয়াস জেন্সেন (Zacharias Janssen) এর নির্মিত দূরবীক্ষণ যন্ত্র আরও উন্নত করে তুলেন গ্যালিলিও গ্যালিলি। গ্যালিলি তার দুরবিনের মাধ্যমে বৃহস্পতি গ্রহর উপগ্রহ এবং শনি গ্রহর বলয় পর্যবেক্ষণ করতেপেরেছিলেন। ১৬১১ সালে ইয়োহানেস কেপলার একটি দূরবীক্ষণ যন্ত্র নির্মাণ করেন যা দ্বারা জ্যোতির্বিজ্ঞানএ নতুন যুগের সূচনা হয়। এ সময় বুধগ্রহ, শুক্রগ্রহমঙ্গলগ্রহবৃহস্পতিগ্রহশনিগ্রহ সহ অগণিত নক্ষত্র ও ধূমকেতু পর্যবেক্ষণ এবং আবিষ্কার করা হয়। মধ্যযুগের শেষ পর্যায় ইউরেনাস গ্রহনেপচুন গ্রহপ্লুটো গ্রহ আরও অনেক নক্ষত্র ও ধূমকেতু আবিষ্কার, পর্যবেক্ষণ ও অনুসরণ করা হয়।
মধ্যযুগের শেষ পর্যায় পদার্থ, রাসায়ন ও গণিত ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করা হয় জ্যোতিষশাস্ত্রে। মহাজাগতিক বস্তুর গঠন, আকার-আকৃতি, বায়ু মণ্ডল (গ্যাসীয় পদার্থ সমূহ), কক্ষ পথ, আহ্নিক গতি, বার্ষিক গতি ইত্যাদি নির্ণয়র জন্য এসব শাস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার শুরুহয়। এর আগে শুধু গনিতশাস্ত্র ব্যবহার হত।
আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান (মহাকাশ আবিষ্কার ও পর্যবেক্ষণ)
১৯৬৯ খ্রীস্টাব্দের ১৬ই জুলাই জ্যোতির্বিজ্ঞান ও মহাকাশ আবিষ্কারের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ অভিযান, প্রথম মনুষ্যবাহী মহাকাশযান অ্যাপোলো ১১, যা ২০ জুলাই চাঁদে অবতরণ করে। এই অভিযানে অংশনেন দলপ্রধান নীল আর্মস্ট্রং, চালক মাইকেল কলিন্স, এডুইন অল্ড্রিন জুনিয়র এবং কমান্ড মডিউল। পরবর্তীতে আবিষ্কার হয়েছে প্লুটো সহ অন্যান্য বামন গ্রহ, নেহারিকা, ধূমকেতুকৃষ্ণগহ্বরবিজ্ঞান ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে তৈরি হয়েছে শক্তিশালী কৃত্রিম উপগ্রহদূরবীক্ষণ যন্ত্র ইত্যাদি। যথাঃ হাবল টেলিস্কোপ। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান মহাবিশ্বকে দূরবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরেছে। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানীর কারনে পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। তাদের মদ্ধে, আন্নি জাম কেনন (Annie Jump Cannon), মারিয়া মিশেল (Maria Mitchell), সি.ডব্লীউ থমবারগ(C.W. Tombaugh) হানরিটা সোয়ান লেভিট (Henrietta Swan Leavitt) প্রমুখ। 

উপাদানসমূহ[উৎস সম্পাদনা]

প্রাথমিক বিবেচনায় মহাকাশূন্যে পদার্থ এবং প্রতিপদার্থ রয়েছে। তবে বিশদ বিবেচনায় মহাকাশূন্যের উপাদানসমূহ হলো:
  • তেজস্ক্রীয় পদার্থ (যেমন: তারকা বা তারা বা সূর্য, ধূমকেতু)
  • অতেজষ্ক্রীয় পদার্থ (যেমন: গ্রহ, উপগ্রহ, বামন গ্রহ, উল্কা)
  • গ্যাসীয় পদার্থ (যেমন: হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, নাইট্রোজেন, সালফার ইত্যাদি)
  • প্রতিপদার্থ (যেমন: এন্টিপ্রোটন, এন্টিইলেক্ট্রন)


(উৎসঃ https://bn.wikipedia.org/wiki/মহাশূন্য) 

Comments